বাউফল প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এক গৃহবধূর লাশ রেখে পালিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন । মৃত্যু ওই গৃহবধূর নাম মোসা. শাহীনুর বেগম (২৬)। মৃত ওই নারী বিলবিলাস গ্রামের বাসিন্দা আবদুস ছালাম খানের ছেলে মো. জুয়েলের স্ত্রী এবং একই গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির সরদারের মেয়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শাহীনুরকে গতকাল রাত ৭টা দিকে বদিউল আলম নামের এক ব্যক্তি নিকট আত্মীয় পরিচয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। পরে কর্তাব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে গাড়ি আনার কথা বলে তিনি কেটে পড়েন।
গৃহবধূর মোসা. শাহীনুর বেগম (২৬)কে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, এমন খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে শাহীনুরের বাবার বাড়ির কয়েকজন স্বজন হাসপাতালে এসে মরদেহ পরে থাকতে দেখে বাউফল থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশটি থানায় নিয়ে যায়।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সুব্রত কুমার বিশ্বাস জানান, “মৃত্যু ওই নারী কে জরুরী বিভাগে নিয়ে নিকট আত্মীয় পরিচয়ের লোকটি, শাহীনুর রশিতে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানান তবে আমার কাছে সে রকম মনে হয়নি ।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় প্রতিবেশী ও শাহীনুরের নিকট আত্মীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় বছর সাড়ে চার আগে শাহীনুর প্রেম করে বিয়ে করেন বিলবিলাস গ্রামের বাসিন্দা আবদুস ছালাম খানের ছেলে মো. জুয়েলকে। তাঁদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও চার মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। জুয়েল ঢাকা জজকোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
শাহীনুরের ফুফু মোসা. রওশন আরা (৪৫) বলেন, ‘আমাদের জানানো হয়েছে, শাহীনুর স্ট্রোক করেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে শাহীনুরের লাশ দেখতে পাই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই শাহীনুরকে তাঁর শাশুড়ি মিনারা বেগম (৫০), ফুফুশাশুড়ি মমতাজ বেগম (৪৫), ননদ নাসিমা বেগম (৩০) ও মাকসুদা বেগম (৩৫) যৌতুকের জন্য বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতন করতেন। শাহীনুর আত্মহত্যা করতে পারে না। তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শাহীনুরের শ্বশুরবাড়ির লোকজন আত্মগোপন করেছে। ওই বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, “যখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় ওই সময়ে জানানো হযেছে, শাহীনুর স্ট্রোক করেছে। পরে জানতে পারি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন এবং লাশ ফেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়েছেন। তবে আত্মহত্যা করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই সে আত্মহত্যা করেছে। শাহীনুর খুবই ভালো স্বভাবের মেয়ে ছিলেন।” বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,“মৃত্যুর কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর আত্মহত্যা করে থাকলেও কী কারণে আত্মহত্যা করেছে, তা তদন্ত করে বের করা হবে।”
Leave a Reply